অমিয় চক্রবর্তী
• সারাংশ : আমাদের পরিবেশে পিঁপড়ে একটি অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। কবি এক পিপড়ের জীবনযাত্রাকে অনুসন্ধানী দৃষ্টিসহকারে পর্যবেক্ষণ করে তার প্রতি সমবেদনাসহকারে এই কবিতাটি রচনা করেছেন। পিপড়ে মাটির প্রাণী। মাটিকে অবলম্বন করেই তাদের জীবনযাত্রা চলে। যদিও তারা খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য মাটির ওপরে উঠে আসে কিন্তু দিনের শেষে অথবা কাজ শেষ হলে আবার মাটির নীচে আশ্রয়গ্রহণ করে। মাটির নীচে কবরে শায়িত মৃত মানুষজনের পার্থিব স্মৃতিকে তারা পরম আদরে জড়িয়ে থাকে। কবির কামনা আমরা পৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী জীবনের আয়ু নিয়ে যারা এসেছি। তারা যেন ক্ষুদ্র জীব পিপড়ের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগী হই কারণ মরণের পরে তারাই আমাদের স্মৃতিকে মর্ত্য পৃথিবীতে জীবন্ত করে রাখবে ।
হাতেকলমে
১.
১.১ অমিয় চক্রবর্তী কোথায় অধ্যাপনা করতেন?
উত্তর। অমিয় চক্রবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যু পলজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।
১.২ তার দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখাে।
উত্তর। তার দুটি কবিতার বইয়ের নাম হল ‘পুষ্পিত ইমেজ’ ও ‘ঘরে ফেরার দিন’।
২. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখাে :
২.১ কবির কী দেখে কেমন যেন চেনা লাগে’ মনে হয়েছে?
উত্তর। ক্ষুদ্র জীব পিপড়ের আনাগােনা দেখে কবির ‘কেমন যেন চেনা লাগে’ মনে হয়েছে।
২.২ কেমন যেন চেনা লাগে’—কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। কবির মনে হয়েছে পিপড়ের গতিবিধি তার পূর্বপরিচিত। তাই তিনি একথা বলেছেন।
২,৩ কবি কাউকে দুঃখ দিতে চাননি কেন ?
উত্তর। কবির ইচ্ছা ছােটো পিঁপড়ে ধুলাের রেণু মেখে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখুক। তাই তিনি তাকে স্থানচ্যুত করে দুঃখ দিতে চাননি।
২.৪ 'কোন অতলে ডাকুক’--কে কাকে এই ডাক দেয় ?
উত্তর। গাছের নীচে কোমল হাওয়া বইতে থাকে। সে ছােটো পিপড়কে এই ডাক দেয়।
২.৫ কৰি আজ প্রাণের কোন পরিচয় পেয়েছেন?
উত্তর। চলমানতাই জীবন আর থেমে থাকাই মৃত্যু। এই কবিতার কবি আমাদের প্রাণের চলমানতাকে বুঝিয়েছেন।
২.৬ দু দিনের ঘর’ বলতে কী বােঝ?
উত্তর। আমাদের মতাে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। তাই কবি আমাদের জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বকে বােঝাতে ‘দু দিনের ঘর’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
৩, প্রার্থনা, নির্দেশ, অনুরােধ বােঝাতে বাংলায় ক্রিয়ার শেষে ‘উক’ যােগ হয়। (যেমন এই কবিতায় থাক +উক = থাকুক) কবিতা থেকে এমন আরও পাঁচটি শব্দ খুঁজে বের করাে।
উত্তর। ঘুরুক, দেখুক, রাখুক, মাখুক, ডাকুক।
৪. নীচের সমােচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলির অর্থপার্থক্য দেখিয়ে প্রত্যেকটি ব্যবহার করে পৃথক পৃথক বাক্যরচনা করাে।
ভরে-ভােরে, ঘরে-ঘােরে,-,ছুঁয়ে- চুঁয়ে,আনল- অনল, -,মধুর- মেদুর-।
উত্তর। ভরে—ভরতি করে—বাড়ির মেয়েরা কলশিতে জল ভরে আনে।
ভােরে—খুব সকালে- ভোরের বেলা পাখিরা আমাদের ঘুম ভাঙায়।
ঘরে—বাড়িতে —ঘরে ঘরে আজ উৎসব চলছে।
ঘােরে-বেড়ায়-ঘােরাই তার নেশা।
ছুঁয়ে-স্পর্শ করে—বড়ােদের চরণ ছুঁয়ে আমরা প্রণাম করি।
চুঁয়ে- ভেদ করে—পুরানাে বাড়ির ছাদ থেকে বর্ষায় জল ঢুয়ে পড়ছে।
আনল—নিয়ে এল—গ্রীষ্মের বৃষ্টি আমাদের স্বস্তি বয়ে আনল।
অনল-অগ্নি-অনল সর্বভুক।
মধুর—মিষ্ট—তােমার মধুর আচরণের জন্য তুমি আমার প্রিয়।
মেদুর-মাখানাে–বাবামায়ের মমতামেদুর দৃষ্টি সন্তানকে সাহস দেয়।
৫. পাশের শব্দঝুড়ি থেকে ঠিক শব্দ বেছে নীচের ছকটি পূরণ করাে :
শব্দঝুড়ি—মাটি, পিপীলিকা, যারা, ধুলা।
উত্তর। পিপীলিকা > পিপড়ে
ধুলাে > ধূলা
মৃত্তিকা > মাটি
যাহারা > যারা
৬. কবিতা থেকে সর্বনামগুলি খুঁজে বের করে আলাদা আলাদা বাক্যে ব্যবহার করাে।
উত্তর। সর্বনামগুলি হল—তার, ওকে, ও, কাউকে, ওই “যারা।
তার—তার কথা আমার জানা নেই। ওকে—ওকে আমার কাছে ধরে আনাে। ওর—ওর কথায় আমি চলি। কাউকে—একথা কাউকে বলবে না। ওই--ওই যে সামনের মাঠ ওখানেই আমি থাকি। যারা—যারা কাল এসেছিলে তারা সবাই জানাে।
৭. নীচের স্তম্ভদুটি মেলাও :
উত্তর।
- বি + স্মরণ = বিস্মরণ।
- অ + চেনা = অচেনা।
- সু+মধুর =সুমধুর।
- প্রতি + দিন = প্রতিদিন।
- কু + কথা = কুকথা
৮. কবিতা থেকে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়াগুলি খুঁজে নীচের খােপে যথাস্থানে বসাও :
উত্তর।
*সমাপিকা ক্রিয়া
ঘুরুক, দেখুক, থাকুক, রাখুক, মাখুক,
ডাকুক, যিরেছে, লাগে, আনল,আছি।
*অসমাপিকা ক্রিয়া
চলায়, ছুঁয়ে, ভরে, করে, দিতে নিতে চলে,
৯. দুটি বাক্যে ভেঙে লেখাে :
উত্তর। মাটির বুকে সবাই এই দুদিনের ঘরে আছি। তার স্মরণে সবাইকে আজ আদর ঘিরেছে।
১০. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
১০.১ পিপড়ের ভাষাহীন চলাচলের মধ্যে বিনিময়ের ভঙ্গিটি কেমন?
উত্তর। পিপড়ে ভাষাহীনভাবে চলাফেরা করে। সেই চলাফেরার মধ্যে বিনিময়ের ভঙ্গিটি ভালােবাসা এবং ব্যস্ততার।
১০.২ “মাটির বুকে যারাই আছি এই দুদিনের ঘরে”—এই দু-দিনের ঘরে’ বলতে কী বোেঝ? কে সবাইকে কীভাবে এই দুদিনের ঘরে আদরে ঘিরে রাখে?
উত্তর। আমাদের সকলে জন্মগ্রহণ করার পর নির্দিষ্ট সময়ের অবসানে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিই অর্থাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হই। এই দুদিনের ঘর’ কথার মাধ্যমে কবি আমাদের জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বকে বুঝিয়েছেন।
আমাদের এই দুদিনের ঘরে’ পিপড়ে সকলকে ভালােবাসার বাঁধনে আদর করে ঘিরে রাখে।
১০.৩. এই কবিতায় কবির কীরূপ মনােভাব প্রকাশ পেয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। এই পৃথিবীতে আমরা বিশ্বপিতার অংশবিশেষ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। যে জীব যত ছােটোই হােক না কেন এই পৃথিবীতে সকলের সমান অধিকার আছে। সকলে মিলে পারস্পরিক ভালােবাসার বাঁধনে আনন্দের মাধ্যমে বেঁচে থাকাই কাম্য। তাই কবিতার মূল সুরই হল সকলকে আপন করে নিয়ে সুখে ও শান্তিতে দিন অতিবাহিত করা।
১০.৪ বিভিন্ন রকমের পিপড়ে এবং তাদের বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনপ্রণালী সম্বন্ধে তােমার পর্যবেক্ষণগুলি একটি খাতায় লেখাে। প্রয়ােজনে ছবিও আঁকতে পারাে।
উত্তর। পিপড়ে আমাদের পরিচিত প্রাণী। সাধারণত আমরা তিন ধরনের পিপড়ে দেখতে পাই আমাদের চারপাশে।
বাসস্থান।👉 খাদ্যাভ্যাস |👉 জীবনযাত্রা
১. কালাে পিপড়ে -👉মাটির নীচে👉 গৃহস্থের বাড়ির খাবারদাবার, চিনি মিষ্টি। 👉 বিষাক্ত নয়, কম কামড়া,
দলবেঁধে থাকে, নিজেদের কাজেই ব্যস্ত থাকে। ক্ষতি
করে না। সঞ্চয়ী।
বাসস্থান।👉 খাদ্যাভ্যাস |👉 জীবনযাত্রা
২. লাল পিঁপড়ে👉 মাটি👉 মিষ্টি জাতীয় যে-কোনাে দ্রব্য, খায়।👉 বিষাক্ত, কামড় দিলে জ্বালা করে। দলবেঁধে খাদ্য সূংগ্রহ করে। গন্ধের মাধ্যমে যােগাযােগ রাখে।
বাসস্থান।👉 খাদ্যাভ্যাস |👉 জীবনযাত্রা
৩. ডেঙো পিঁপড়ে 👉 মাটির নীচে গর্ত 👉মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য এবং মানুষের যে-কোনাে খাদ্য মৃত জীবজন্তু।👉একত্রে থাকে, শিকার ধরে।👉আকারে বড়াে এবং কালাে রঙের খাদ্য জোগাড় করে
গর্তে জমা করে।
© Avijit Ghosh ✍️
**************************************************