হাট কবিতা যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
হাট
কবি - যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
হাতেকলমে
১.১ কোন্ সাহিত্যিক গােষ্ঠীর সঙ্গে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল?
উত্তর। দুঃখবাদী কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত কল্লোল সাহিত্যগােষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১.২ তার রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে।
উত্তর। মরুমায়া’ এবং ‘মরুশিখা’ তার লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম।
২. নীচের বাক্যগুলি থেকে এমন শব্দ খুঁজে বের করাে যার প্রতিশব্দ কবিতার মধ্যে আছে। কবিতার সেই শব্দটি পাশে লেখাে।
উত্তর।
২.১ আঁধার-সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছে। সাজে সন্ধ্যায়।
২.২ আলাে আমার আলাে, ওগাে আলাে ভুবন ভরা। = আলাে—আলােক বর্ণ।
২.৩ তুমি আমার সকালবেলার সুর।
= সকালবেলা—প্রভাতবেলা।
২.৪, আমার রাত পােহালাে শারদপ্রাতে।
= রাত-নিশা।
২.৫ দিনের বেলা বাঁশি তােমার বাজিয়েছিলে। ৪ দিনের বেলা—দিবসেতে।
৩. সমােচ্চারিত বা প্রায়-সমােচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলাের অর্থ পার্থক্য দেখাও :
দীপ, দ্বীপ, বাধা, বাঁধা, দর, দড়, নিত্য, নৃত্য, শাখ, শাঁখ।
উত্তর। দীপ—প্রদীপ।
দ্বীপ- জলবেষ্টিত ভূখণ্ড
দর- দাম
দড়,-দক্ষ
শাখ—ডাল/শাখা
শাঁখ - শঙ্খ
বাধা-বিপদ,
বাধা-বন্ধ করা।
নৃত্য-নাচ
নিত্য-রােজ
৪. নীচের শব্দগুলি গদ্যে ব্যবহার করলে কেমন হবে লেখাে :
সহিয়া, সেথা, সহি, সবে, তবে, মুদিল।
শব্দ - গদ্যরূপ
সহিয়া - সহন করে
সেথা -সেখানে
সহি - সহ্য করি
সবে - সবাই/সকলে।
তবে - তাহলে
মুদিল -বুজল/বন্ধ করল
৫. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর লেখাে :
৫.১ কতকগুলি গ্রামের পরে সাধারণত একটি হাট চোখে পড়ে?
উত্তর। সাধারণত দশ-বারােটা গ্রামের পর একটা হাট চোখে পড়ে।
৫.২ হাটে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে না কেন?
উত্তর। ফাঁকা মাঠের মাঝখানে হাট বসে। দিনের শেষে সন্ধ্যায় সকলে নিজ নিজ গৃহে ফিরে যায়। তাই হাট নির্জনে একা পড়ে থাকে, সেখানে প্রদীপ জ্বলে না।।
৫.৩ কার ডাকে রাত্রি নেমে আসে ?
উত্তর। হাটের মধ্যে একক কাকের ডাক রাত্রির আগমনবার্তা ঘােষণা করে।
৫.৪ ওপারের লােক কে এপারেতে আসে?
উত্তর। বিক্রেতারা তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এপারে পসরা নামায়। সেই সামগ্রী কেনার জন্য ওপারের লােক এপারে আসে।
৫.৫ ‘হিসাব নাহিরে—এল আর গেল কত ক্রেতা বিক্রেতা'—কোনাে হিসাব নেই কেন?
উত্তর। দিনেরবেলা হাট চলাকালীন অসংখ্য মানুষ প্রয়ােজনের তাগিদে হাটে আসে। সেখানে মানুষের আনাগােনার হিসাব রাখার মতাে লােক কেউ থাকে না। সেজন্যই কবি বলেছেন হাটে মানুষের আনাগােনার কোনাে হিসাব নেই।
৬. কবিতায় বর্ণিত হাটের চেহারাটি কেমন লেখাে :
উত্তর। হাটের চেহারা বর্ণনা করার জন্য আমরা হাটকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি।
(১) হাট বসার আগে (২) হাট চলাকালীন (৩) হাট ভাঙার পর।
(১) হাট বসার আগের চেহারা :হাট জনশূন্য এবং ফাকা। সেখানে উদার আকাশ এবং মুক্ত বাতাসের খেলা চলে।
(২) হাট চলাকালীন চেহারা : চেনা-অচেনা মানুষের ভিড়, কোলাহল, মাল কেনা ও দর কষাকষি করা। অন্তহীন বলাপ। মাল পরখ করা এবং কেনাবেচা।
(৩) হাট ভাঙার পর : দোচালা বন্ধ হয়ে যায়। হাট অন্ধকারে ঢেকে যায়, সেখানে নির্জনতা বিরাজ করে।
৭. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখাে :
৭.১ হাটের স্থান ছাড়িয়ে দূরের গ্রামের ছবি কীভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে?
উত্তর। হাট’ কবিতায় কবি একটি হাটের সুন্দর বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। দশ-বারোখানি গ্রামের মাঝখানে একটি হাট দেখা যায়। গ্রামের লােকজন হাটের জন্য নির্দিষ্ট দিনে প্রয়ােজনীয় সামগ্রী কেনাবেচা করে এবং যে যার ঘরে ফিরে যায়। গ্রামের প্রতিটি গৃহকোণে সন্ধ্যাবেলায় প্রদীপ জ্বলে ওঠে। সন্ধ্যার অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া হাট গ্রামের পাশেই বয়ে যাওয়া নদীর বাতাসের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পায়। গ্রামের লােকজন স্ব স্ব কাজে ব্যস্ত থাকলেও হাট নির্জনে একা পড়ে থাকে চেনা-অচেনা মানুষের আগমনের প্রতীক্ষায়।
৭.২ প্রকৃতির ছবি কীরূপ অসীম মমতায় কবিতায় আঁকা হয়েছে—তা আলােচনা করাে।
উত্তর। দুঃখবাদী কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত তার হাট’ কবিতায় মমতামেদুর দৃষ্টি নিয়ে প্রকৃতির ছবি আমাদের উপহার দিয়েছেন। হাট প্রাণহীন, কিন্তু অচেতন হাটের মধ্যে প্রাণসঞ্চার করে কবি হাটের এক জীবন্ত বর্ণনা উপহার দিয়েছেন। হাট দুপুরবেলা বসে এবং সন্ধ্যায় ভেঙে যায়। হাটের অবসানে সকলে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যায়। সেখানে। সন্ধ্যাবেলায় প্রদীপ জ্বালানাে এবং ঝাট দেবার জন্য কেউ অপেক্ষা করে থাকে না। সারারাত অন্ধকারের মধ্যে হাট নির্জনে আকাশ এবং মুক্ত বাতাসের স্বচ্ছন্দ গতির মাধ্যমে চিরকাল একই খেলা চলতে থাকে।
৭. বাজে বায়ু আমি বিদ্রুপ বাঁশি’—কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তােমার মনে হয়?
উত্তর। দিনের শেষে সন্ধ্যায় হাট ভেঙে যায়। সবাই যে যার মতাে নিজ নিজ গৃহে ফিরে যায়। হাট নির্জনে একাই থাকে। হাটের দরজা সর্বদা সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রবহমান বাতাসহীন বাঁশের ছিদ্রপথ দিয়ে প্রবেশ করে বাঁশির মতাে শিসের আওয়াজ করে। কবির কল্পনায় মনে হয়েছে প্রকৃতি হাটের নির্জনতাকে ব্যঙ্গ করছে শিসধ্বনির মাধ্যমে।
৭.৪ ‘উদার আকাশে মুক্ত বাতাসে চিরকাল একই খেলা’-কোন্ প্রসঙ্গে কবি আলােচ্য পঙক্তিটি লিখেছেন?
তিনি এখানে কোন্ ‘খেলার কথা বলেছেন? ‘চিরকাল’ চলে বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর। হাট কবিতায় কবি এই পৃথিবীকে একটি নাট্যমঞ বলে কল্পনা করেছেন। পৃথিবী রূপ রঙ্গমঞ্চে আমরা জন্মাই আবার মৃত্যুবরণ করি। সুতরাং মানবজীবনের জন্মমৃত্যুর উল্লেখ করে কবি চিরকাল একই খেলার কথা বলেছেন।
কবি এখানে খেলা বলতে মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন, মানুষের জন্মকে আসা এবং মৃত্যুকে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করে একথা বলা হয়েছে।
চিরকাল চলার অর্থ হল জীবনের গতিময়তা যা নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বদা চলতে থাকে। পৃথিবী যখন সৃষ্টি হয় তখন থেকেই মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু ঘটে চলেছে। এটি একটা চলমান ধারা যা সনাতন, বিরামহীন। কবি এই জন্মমৃত্যুর নিরবচ্ছিন্ন প্রবহমানতাকে চিরকাল চলার কথা বলেছেন।
৭.৫ তােমার দেখা কোনাে হাটের/বাজারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দূরে থাকে, এমন কোনাে বন্ধুর কাছে একটি চিঠি লেখাে।
উত্তর।
প্রিয় অভিজিৎ,
আন্দুল-৭-২-২২
তাের চিঠি পেয়ে জানতে পারলুম যে তুই আমাদের হাটের অবস্থা জানতে আগ্রহী। এই পত্র মারফত তােকে আমাদের হাটের বিবরণ জানাচ্ছি।
আমাদের গ্রামের পাশেই মধুবাটীতে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে, সােমবার ও শুক্রবার। সাধারণত দুপুরবেলা এই হাট বসে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত কেনাবেচা চলে। গ্রামের মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়বিক্রয়ের জন্য সেখানে সমবেত হয়। একদিন হাটের পর আবার কয়েকদিনের বিরতিতে হাট বসে ফলে গ্রামের মানুষজন হাটবারে অপেক্ষায় থাকে। আমি প্রতি হাটবারে বাবা বা মায়ের সঙ্গে হাট করতে যাই। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে মা প্রয়ােজনীয় সামগ্রীর একটা
ফর্দ সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পাছে কোনাে জিনিস আনতে ভুল হয়ে যায়। আমাদের বাড়িতে রােজকার রান্না করার জন্য শাকসবজি, টুকিটাকি বাসনপত্র, জামাকাপড়, গামছা, শাড়ি ইত্যাদি কেনার পর আমরা বিকালে বাড়ি ফিরি।
হাট আসলে একটা মিলনস্থল যেখানে অসংখ্য মানুষের জমায়েত ঘটে। বহু লােকের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। মা-বাবা প্রয়ােজনীয় সামগ্রী দরদাম করে ব্যাগ ভরতি করেন।
হাট যেতে আমার ভালােই লাগে। কতলােকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়। মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। আমরা ভালাে আছি। তােদের শুভকামনা করে ইতি টানছি।
প্রতি
শ্রীমান অভিজিৎ ঘোষ । ইতি
প্রযত্নে—জয়দেব ঘোষ। তাের (নিজের নাম)
আন্দুল, হাওড়া।
***********************************************