সারসংক্ষেপ : পল্লিকবি জসীমউদ্দিন ভােরবেলা লালমােরগের ডাকে ভােরের বার্তা পেলেন। সকালে সূর্যের রঙিন আলাে প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে পড়ে। চখাচখি ঝিকিমিকি বালুচরে ঘুরে বেড়ায়। বর্ষার ঢেউ সেখানে কত কিছু লিখে গেছে। বর্ষার জলধারার স্রোত কলকল শব্দে এগিয়ে চলেছে সেখানে গাভশালিক কর্তৃত্ব করার স্বপ্ন দেখে। বাবুই পাখি ধানপাতা ও তালপাতা দিয়ে নকশা করে বাসা বােনে। কোড়াকুড়ি বর্ষাকালে ফসলের খেত থেকে কৰিকে যে চিঠি দিলেন তা থেকে জানা যায় সবুজ পাতার আসরগুলি জলধারায় যেতে নেচে উঠেছে। আকাশজুড়ে মেঘের গুরুগুরু ডাক শােনা যাচ্ছে এবং বাতাসকে উদাস করে দিচ্ছে। খােকা ভাইয়ের চিঠি শীতের ভােরের রােদের মতাে মিষ্টি লাগছে। দূরে নীল আকাশে পাখিরা আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে।
**হাতেকলমে**
১.১ কবি জসীমউদ্দিনকে বাংলা কাব্য জগতে কোন অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে ?
উত্তর। কবি জসীমউদ্দিনকে বাংলা কাব্য জগতে ‘পল্লিকবি’ অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখাে।
উত্তর। কবি জসীমউদ্দিনের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম—‘রাখালী’, ‘নক্সী কাঁথার মাঠ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
২.১ কবি কার কার থেকে চিঠি পেয়েছেন?
উত্তর। কবি লালমােরগ, চখাচখি, গাঙশালিক, বাবুই পাখি, কোড়াকুড়ী ও খােকা ভাই এর কাছ থেকে চিঠি পেয়েছেন।
২.২ লালমােরগের পাঠানাে চিঠিটি কেমন?
উত্তর। লালমােরগের পাঠানাে চিঠিটি ভাের জাগানাের সুরে ভরা এবং শিশু ঊষার রঙিন হাসির রং করা।
২.৩ চখাচখি কেমন চিঠি পাঠিয়েছে?
উত্তর। চখাচখি বালুচরের ঝিকিমিকিতে বর্ষার ঢেউ এর কত কিছু লেখা চিঠি পাঠিয়েছে।
২.৪ গাঙশালিক তার চিঠিতে কী বলেছে?
উত্তর। গাঙশালিক তার চিঠিতে সে গাঙের পাড়ের মােড়ল হওয়ার কথা বলেছে।
২.৫ বাবুই পাখির বাসার থেকে আসা চিঠিটি কেমন?
উত্তর। বাবুই পাখির বাসা থেকে আসা চিঠিটি ধানের পাতা ও তালপাতার বুনট-ধরা নকশা আঁকা।
২.৬ কোড়াকুড়ির পাঠানাে চিঠিটির বর্ণনা দাও।
উত্তর।-কোড়াকুড়ির পাঠানাে চিঠিতে বর্ষাকালের ফসল খেতের সবুজপাতার আসরগুলি জলধারায় মেতে উঠে নাচছে। আকাশ জুড়ে মেঘের গুরু গুরু ডাক শােনা যাচ্ছে এবং উদাস বাতাস আছড়ে পড়ে যেন কাকে চাইছে।
২.৭ কার চিঠি পাওয়ায় কবির মনে হয়েছে নিখিল বিশ্ব তাকে চিঠি পাঠিয়েছে?
উত্তর। খােকা ভাই এর চিঠি পাওয়ায় কবির মনে হয়েছে নিখিল বিশ্ব তাকে চিঠি পাঠিয়েছে।
২.৮ এই কবিতায় কোন্ ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে?
উত্তর। এই কবিতায় বর্ষা ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে।
২.৯ কবিতায় অন্য ঋতুর পটভূমি সত্ত্বেও খােকা ভাই এর চিঠির লেখনখানি শীতের ভােরের রােদের মতাে মিঠে মনে হওয়ার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। শীতকালে ভােরের প্রথম রােদ যেমন আরামদায়ক তেমন মিঠে। কবির কাছে খােকা ভাই এর চিঠির লেখনখানি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শীতের ভােরের রােদের মতাে কবির কাছে তাই উহা খুব মিষ্টি লাগছে কারণ ভালােবাসার উষ্ন পরশ নিয়ে আসে।
২.১০ “খুশির নূপুর ঝুমুর-ঝামুর বাজছে আমার নিরালাতে”—পঙক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। কবির নিরালা নির্জন জীবনে খােকা ভাই এর চিঠি তার মনে আনন্দের নুপুর বাজছে। যে নূপুরের আওয়াজ কবির মনে খুশির বান ডেকেছে। কবি মন যে সুদূরে চলে যেতে চায়।
৩. কবিতা থেকে এমন একটি শব্দ খুঁজে বের করাে যা কোনও ধ্বনির অনুকরণে তৈরি। একটি উদাহরণ দেওয়া হল। যেমন-কলকল।
উত্তর। কিচিরমিচির, গুরুগুরু, ঝুমুর-ঝামুর।
৪. শব্দঝুড়ি থেকে ঠিক শব্দ নিয়ে শূন্যস্থানে বসাও : শব্দঝুড়ি : স্রোতে, রঙিন, কঁাদন, গাঙ।
উত্তর। রঙ্গিন > রঙিন। গঙ্গা > গাঙ। স্রোতে > সোঁতে। ক্রন্দন > কাঁদন।
৫. ‘ঢেউ-এ ঢেউ-এ’ এখানে ঢেউ-এ শব্দটি পরপর দুবার ব্যবহার হওয়ায় অর্থ দাঁড়িয়েছে, ‘অজস্র’ ঢেউ-এ। অর্থাৎ একই শব্দ পরপর দুবার ব্যবহারে বহুবচনের ভাব তৈরি হয়েছে। এই কবিতাটি থেকে আরও তিনটি অংশ উদ্ধৃত করাে যেখানে এমন ঘটেছে।
উত্তর। ঝাকে ঝাকে, ঝুমুর-ঝামুর, গুরু গুরু।
৬. ‘গাঙের পাড়ের মােড়ল’-শব্দ বন্ধটিতে পরপর দুবার এর সম্বন্ধ বিভক্তিটি এসেছে। কবিতা থেকে এমন আরও তিনটি শব্দ বন্ধ খুঁজে বের করাে, যেখানে পরপর দুবার ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি প্রয়ােগে সম্বন্ধপদ তৈরি হয়েছে।
উত্তর। পাখির বাসার থেকে’, কোড়াকুড়ীর বর্ষাকালের ফসল খেতে, শীতের ভােরের রােদের মতাে।
৭. ‘কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া’ পদক্রম অনুসারে নীচের বাক্যগুলিকে আবার লেখাে :
৭.১ লিখে গেছে গাঙ শালিকে গাঙের পাড়ের মােড়ল হতে।
উত্তর। গাঙশালিকে গাঙের পাড়ের মােড়ল হতে লিখে গেছে।
৭.২ ইহার সাথে পেলুম আজি খােকা ভাই এর চিঠি।
উত্তর। আমি খােকা ভাই এর একটি চিঠি ইহার সাথে।
৭.৩ সবুজ পাতার আসরগুলি জলধারায় মেতে নাচছে।
উত্তর। সবুজ পাতার আসরগুলি জলধারায় মেতে নাচছে।
৭.৪ উদাস বাতাস আছড়ে বলে কে যেন ৰা চাইছে কাকে।
উত্তর। উদাস বাতাস আছড়ে কে যেন বা চাইছে কাকে বলে।
৭.৫| শীতের ভােরের রােদের মতাে লেখনখানি লাগছে মিঠি।
উত্তর। লেখনখানি শীতের ভােরের রােদের মতাে মিঠি লাগছে।
৮| নীচের বাক্যগুলিকে ভেঙে দুটি বাক্যে পরিণত করাে :
৮.১ চিঠি পেলুম লাল মােরগের ভাের জাগানাের সুরভরা।
উত্তর। লাল মােরগের চিঠি পেলুম। চিঠিটি ভাের জাগানাের সুরভরা।
৮.২ সবুজপাতার আসরগুলি নাচছে জলধারায় মেতে।
উত্তর। সবুজপাতার আসরগুলি আছে। সেগুলি জলধারায় মেতে নাচছে।
৮.৩ শীতের ভােরের রােদের মতাে লেখনখানি লাগছে মিঠি।
উত্তর। শীতের ভােরের রােদ মিঠা। তার লেখনখানি মিঠি লাগছে।
৮.৪ আকাশ জুড়ে মেঘের কঁাদন গুরু গুরু দেয়ার ডাকে।
উত্তর। গুরু গুরু দেয়া ডাকছে। মনে হচ্ছে আকাশ জুড়ে মেঘ কাঁদছে।
৮.৫ লিখে গেছে গাঙশালিকে গাঙের পাড়ের মােড়ল হতে।
উত্তর। গাঙশালিক লিখে গেছে। সে বলেছে গাঙের পাড়ের মােড়ল হতে।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
৯.১ কবি প্রকৃতির কোন্ কোন্ প্রতিনিধির কাছ থেকে কেমন সমস্ত চিঠি পেয়েছিলেন। বিশদে লেখাে।
উত্তর। কবি লাল মােরগের ভাের জাগানাের সুরভরা চিঠি পেলেন। তার চিঠিতে যেন ঊষার প্রথম আলােয় রঙিন। চখাচখির চিঠি পেলেন যেখানে বালুচরের ঝিকিমিকিতে ঢেউ-এ ঢেউ-এ কত কিছু লিখে গেছে। ধান ও তালপাতার বুনট করা নকশা আঁকা বাবুই পাখির চিঠি কবি পেয়েছিলেন। কোড়াকুড়ী চিঠিতে বর্ষাকালের ফসল খেতের সবুজপাতার আসরগুলাে জলধারায় মেতে নাচছে। তাছাড়া খােকা ভাই এর চিঠি পেয়েছিলেন যা ভােরের রােদের মত মিঠে ছিল।
৯.২ খােকা ভাই এর চিঠিটির প্রসঙ্গে কবি যে সমস্ত উপমা ও তুলনাবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তাদের ব্যবহারের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। কবি থােকা ভাই এর চিঠি পেয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছেন। তার চিঠিটা যেন শীতের ভােরের রােদের মতো মিঠে লাগছিল এই উপমাটি ব্যবহার করেছেন। খােকা ভাইয়ের চিঠিতে লেখা হরফকে রঙিন হাতের লেখা বলে তুলনা করেছেন। এখানে তুলনাবাচক শব্দ হল মতাে।
*************************************************